পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের পর যে ওয়াক্তে সুন্নত আছে ঔয়াক্তগুলোতে এই আমলসমূহ সুন্নত পড়ে তারপর আমল করতে হবে।
১ নং দু‘আ
اَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা। একমাত্র তোমার নিকট থেকেই শান্তি পাওয়া যায়। তুমি বরকতময় হে মহাপরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী!
ফযীলত: হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শেষ করতেন তখন ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পর এই দু‘আ পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯১)
২ নং দু‘আ
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার যিকির, শোকর ও উত্তম ইবাদতের ব্যাপারে সাহায্য করো।
ফযীলত: হযরত মু‘আয বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বলেছেন, হে মু‘আয! আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে ভালবাসি। আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি কখনো প্রতি নামাযের পর এই দু‘আ ছাড়বে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫২২)
৩ নং দু‘আ
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ. اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য। তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। সকল বিষয়ের উপর তিনি ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তাতে কেউ বাঁধা দিতে পারে না, আর তুমি যাতে বাঁধা দাও, তা কেউ দিতে পারে না এবং কোনো মর্যাদাশালীকে তার মর্যাদা তোমার থেকে উপকার পৌঁছাতে পারে না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯৩)
৪ নং দু‘আ
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি থেকে, কবরের শাস্তি থেকে, হায়াত ও মওতের যাবতীয় ফেতনা থেকে এবং কানা দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে।
ফযীলত: হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমাদের কেউ তাশাহহুদ পড়ে, তখন সে যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চেয়ে উল্লিখিত দু‘আ পড়ে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৮৮)
বি:দ্র: উক্ত দু‘আ সালাম ফিরানোর পূর্বেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়।
৫ নং দু‘আ
اَللّٰهُمَّ اِنِّي اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَاَعُوْذُ بِكَ اَنْ اُرَدَّ اِلٰى اَرْذَلِ الْعُمُرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুর্বলতম বয়সে উপনীত হওয়া থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফেতনা থেকে এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬৩৭০)
৬ নং দু‘আ
আয়াতুল কুরসী (সুন্নাতে মুয়াক্কাদার পর)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ * لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْم * لَهٗ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ * مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِه * يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ * وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه اِلَّا بِمَا شَآءَ * وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ * وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا * وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ*
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তাদের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কিছুই জানে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসী সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৫৫)
ফযীলত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। (অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সাথেই বেহেশতে প্রবেশ করবে।) (নাসাঈ, সুনানে কুবরা, হাদীস: ৯৮৪৮)
বি. দ্র. লম্বা দু‘আসমূহ ফরজ নামাজের পর সুন্নত থাকলে সুন্নতের পরে পড়া উত্তম।
৭ নং দু‘আ
سُبْحَانَ اللّٰهِ (আল্লাহ পূত-পবিত্র) ৩৩ বার,
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (সকল প্রশংসা আল্লাহর) ৩৩ বার
اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) ৩৩ বার
অতঃপর ১বার
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْـــمُـلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।
ফযীলত: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর সুবহানাল্লহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লহু আকবার ৩৩ বার এবং
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَـلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْـرٌ
১বার পড়ে ১০০ পূর্ণ করবে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্র্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯৭)
বি. দ্র.
سُبْحَانَ اللّٰهِ (আল্লাহ পূত-পবিত্র) ৩৩ বার,
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (সকল প্রশংসা আল্লাহর) ৩৩ বার
اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) ৩৩ বার
এভাবে পড়ার কথাও হাদীসে রয়েছে। এর ফযীলত নিম্মরূপ:
হযরত কা‘ব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর কিছু আমল এমন রয়েছে, যেগুলোর আমলকারী বঞ্চিত হয় না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯৬)