ইশরাক
সূর্য উঠা শুরু হওয়া থেকে নিয়ে ১৫-২০মি. পর এই নামাযের সময় শুরু হয় এবং দ্বিপ্রহর পর্যন্ত এর সময় থাকে। সময় হওয়ার পর পর ইশরাক পড়া ভাল। এই নামায নফল। দুই চার রাকা‘আত যা পারা যায় পড়া। এই নামায যে পড়ে, সারা দিনের সমস্ত প্রয়োজনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। (আততারগীব ওয়াত তারহীব হা.নং ১০০৯)
রাক‘আত সংখ্যা
হযরত হাসান বিন আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ে, তারপর আল্লাহর জিকির করতে থাকে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। তারপর দুই রাক‘আত বা চার রাক‘আত নামায আদায় করে, তাহলে জাহান্নামের আগুণ তার চামড়া স্পর্শ করবে না। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৬৭১]
ইশরাকের নামায দুই রাক‘আত বা চার রাক‘আত।
ফায়দা
১. হযরত মু‘আয ইবনে আনাস জুহানী রাযি. হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ শেষ করে উক্ত জায়গায় বসে থাকে, ভালো কথা ছাড়া কোন কথা না বলে। অতঃপর দুই রাকা‘আত ইশরাকের নামায পড়ে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা হতে অধিক হয়। (আবু দাউদ)
২. হযরত হাসান ইবনে আলী রাযি. বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই এরশাদ করিতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার যিকিরে মশগুল থাকে। অতঃপর দুই অথবা চার রাকা‘আত (ইশরাকের নামায) পড়ে; দোযখের আগুন তার চামড়া (ও) স্পর্শ করবে না। (বায়হাকী)
৩. হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামা‘আতের সাথে আদায় করে। অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার যিকিরে মশগুল থাকে, তারপর দুই রাকা‘আত নফল পড়ে, তবে সে হজ্জ ও ওমরার সওয়াব লাভ করে। হযরত আনাস রাযি. বলেন, নবী কারিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার এরশাদ করেছেন, পরিপূর্ণ হজ্জ ও ওমরার সওয়াব, পরিপূর্ণ হজ্জ ও ওমরার সওয়াব, পরিপূর্ণ হজ্জ ও ওমরার সওয়াব লাভ করে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৫৮৬)
৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দিনের শুরুতে আমার জন্য ৪ রাকাত নামায পড়, দিনের শেষ পর্যন্ত তোমার সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমি যথেষ্ট হয়ে যাব। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৪৭৫)
বি. দ্র. এই ফযীলত ইশরাক নামাযের জন্য। অথবা এর দ্বারা চাশতের নামাযও উদ্দেশ্য হতে পারে।
৫. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাহিনী পাঠালেন। যারা অতি অল্প সময়ে সমস্ত গনীমতের মাল নিয়ে ফিরে আসলো। একজন সাহাবী রাযি. আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম), আমরা এমন বাহিনী দেখি নাই যারা অতি অল্প সময়ে সমস্ত গনীমতের মাল নিয়ে ফিরে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে কম সময়ে এই গনীমতের মাল থেকে অধিক গনীমত অর্জনকারী ব্যক্তির কথা বলবো না! সে ঐ ব্যক্তি, যে নিজের ঘর হতে উত্তমরূপে উযূ করে মসজিদে যায়, ফজরের নামাজ পড়ে। অতঃপর (সূর্যোদয়ের পর) ইশরাকের নামায পড়ে। এই ব্যক্তি অতি অল্প সময়ে অনেক বেশী মুনাফা উপার্জনকারী। (আবু ইয়ালা, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)
চাশত
ইশরাক এবং চাশতের নামাযের সময় এক। তবে বেলা এগারটার দিকে চাশতের নামায পড়া ভাল। চাশতের নামায সর্বোচ্চ বার রাকা‘আত। এই নামাযও নফল। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৪)
রাক‘আত সংখ্যা
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: لَقِيتُ أَبَا ذَرٍّ فَقُلْتُ: يَا عَمِّ، أَقْبِسْنِي خَيْرًا، فَقَالَ: سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا سَأَلْتَنِي، فَقَالَ: ” إِنْ صَلَّيْتَ الضُّحَى رَكْعَتَيْنِ لَمْ تُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا أَرْبَعًا كُتَبْتَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا سِتًّا كُتَبْتَ مِنَ الْقَانِتِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا ثَمَانِيًا كُتَبْتَ مِنَ الْفَائِزِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا عَشْرًا لَمْ يُكْتَبْ لَكَ ذَلِكَ الْيَوْمَ ذَنْبٌ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللهُ لَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ “
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবু যর রা. এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তখন আমি তাকে বলি যে, হে চাচা! আমাকে কল্যাণী উপদেশ দান করুন। তিনি বললেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছো, তেমনি আমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এমনটি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, যদি তুমি চাশতের নামায দুই রাক‘আত পড়, তাহলে তোমাকে গাফেলদের মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যদি চার রাক‘আত পড়, তাহলে তোমাকে নেককারদের মাঝে গণ্য করা হবে। আর যদি তুমি ছয় রাক‘আত পড়, তাহলে তোমাকে আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে। আর যদি তুমি আট রাক‘আত পড়, তাহলে তোমাকে সফলকাম ব্যক্তিদের তালিকায় লেখা হবে। আর যদি দশ রাক‘আত পড়, তাহলে সেদিন তোমার আমলনামায় কোন গোনাহ লেখা হবে না। আর যদি বার রাক‘আত পড়, তাহলে তোমার জন্য জান্নাতে তোমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। [সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৯০৬, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৩৪১৮, ১৯, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৮৯০]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ: الْوِتْرُ قَبْلَ النَّوْمِ، وَصَلَاةُ الضُّحَى رَكْعَتَيْنِ، وَصَوْمُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। ঘুমের আগে বিতর পড়া। চাশতের নামায দুই রাক‘আত পড়া এবং প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখা। [মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়া, হাদীস নং-১১, সুনানে দারামী, হাদীস নং-১৪৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৫৩৬]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ صَلَّى الضُّحَى ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً، بَنَى اللَّهُ لَهُ قَصْرًا مِنْ ذَهَبٍ فِي الْجَنَّةِ
হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি চাশতের নামায বার রাক‘আত পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণের একটি অট্টালিকা তৈরী করে দিবেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮০, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪৭৩]
চাশতেরর নামায দুই রাক‘আত থেকে বারো রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়।
ফায়দা
সহীহ হাদীসে হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আট রাকাত চাশতের নামায আদায় করলেন।’-সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ২৫৩১
আরেকটি হাদীসে হযরত আয়েশা রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাকাত চাশত পড়তেন। আল্লাহ চান তো, এর চাইতে বেশিও পড়তেন।’-সহীহ মুসলিম হাদীস : ৭১৯
হযরত আবু যর রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়া-গ্রন্থির উপর সদকা রয়েছে। অতএব (এর জন্য) প্রত্যেক তাসবীহ সদকা হবে। প্রত্যেকটি তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ বলা) সদকা হবে, প্রত্যেকটি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সদকা হবে, প্রত্যেকটি তাকবীর সদকা হবে, আমর বিল মারূফ সদকা হবে, নাহি আনিল মুনকার সদকা হবে। (অর্থাৎ এর প্রত্যেকটি দ্বারা ঐ সদকা আদায় করা যাবে।) আর এর প্রত্যেকটির জন্য চাশতের দু’রাকাত নামাযই যথেষ্ট হবে।’-সহীহ মুসলিম হাদীস : ৭২০
অতএব চাশতের নামায কমপক্ষে দু’রাকাতও পড়া যাবে। বেশি তো পড়া যাবেই।