নামাযের সময়
২৪ জুমাদাল উখরা, ১৪৪৭ হিজরী
মাসাইল

মাগরিবের ওয়াক্ত

বেলা সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত এবং ইফতারের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। (ইফতার দেরি করে করা মাকরূহ) মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে আযান ইকামাত দিয়ে নামায আদায় করা উত্তম। পশ্চিম আকাশ বেশ কিছু সময় লালিমা থাকে, এই লালিমা শেষ হওয়ার পর একটু সাদা ভাব হয়। সাদা ভাব শেষ হওয়ার পর আকাশ কালো হতে শুরু করে। আকাশ কালো হওয়ার আগ পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে। অর্থাৎ আকাশের অবস্থা যতক্ষণ লাল ও সাদা মিশ্রিত থাকে ততক্ষণ মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে। মাগরিবের সময় প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। আমাদের দেশের অনেকে মনে করে মাগরিবের সময় ১৫-২০ মি. থাকে। যার কারণে এই সময়ের ভিতর মাগরিব পড়তে না পারলে আর পড়ে না। মনে করে কাযা যখন হয়ে গেল তখন পরে এক সময় পড়ে নিব। অথচ সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে নামায পড়লেও আদায় হয়ে যাবে। কোনো ইমামের মতে লাল শেষ হয়ে সাদা শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। আমাদের হানাফী মাযহাবে এ মতের উপর ফাতাওয়া নয়। তাই একান্ত ঠেকা ছাড়া ঐ সময়ে ইশা পড়বে না। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৫-২৬)

মাগরিবের উত্তম সময়

মাগরিব নামায ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পড়া উত্তম। কিন্তু রমযান মাসে একটু দেরি করে পড়তে বলা হয়েছে। যাতে আগে ইফতার করে নেয়া যায়। কারণ আগে ইফতার করতে পারলে নামায খুশু-খুযুর সাথে হবে। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩১)

রাক‘আত সংখ্যা

মাগরিবের নামায মোট ৫ রাক‘আত। এর মধ্যে ৩ রাক‘আত ফরজ এবং ২ রাক‘আত সুন্নত (সুন্নতে মু‘আক্কাদাহ)।

আউয়াবীন

মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাত পড়ার পর থেকে ইশার সময় হবার আগ পর্যন্ত যে নফল নামায পড়া হয়, সেটাকে আওয়াবীন নামায বলা হয়। তবে কিছু হাদীসে চাশতের নামাযকেও আওয়াবীন নামায বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। বাকি আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ হল, চাশতের নামায আলাদা আর আওয়াবীন নামায স্বতন্ত্র।

আউয়াবীন নামাযের ফায়দা

১. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাযের পর ছয় রাকা‘আত এইভাবে পড়ে যে, এর মাঝে কোন অনর্থক কথা না বলে, তবে তার বার বৎসর ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ হয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৩৩৫)

বি.দ্র. মাগরিবের পর দুই রাকা‘আত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ছাড়া চার রাকা‘আত নফল অতিরিক্ত পড়লে ছয় রাকা‘আত হয়ে যাবে। কোন কোন উলামায়েকেরামের মতে এই ছয় রাকা‘আত মাগরিবের দুই রাকা‘আত সুন্নাতে মুআক্কাদা থেকে অতিরিক্ত। (মেরকাত, মুজাহেরে হক)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ، مَا بَيْنَ أَنْ يَلْتَفِتَ أَهْلُ الْمَغْرِبِ، إِلَى أَنْ يَثُوبَ إِلَى الْعِشَاءِ»

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘সালাতুল আওয়াবীন’ হল মাগরিবের নামায পড়ে ফারিগ হবার পর থেকে নিয়ে ইশার নামাযের সময় হওয়া পর্যন্ত যে নামায পড়া হয় তাকে বলে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৯২২]

ابْنَ الْمُنْكَدِرِ، وَأَبَا حَازِمٍ يَقُولَانِ: {تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ} [السجدة: 16]، ” هي مَا بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَصَلَاةِ الْعِشَاءِ،صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ “

ইবনুল মুনকাদির এবং আবু হাযেম বলেন, সূরা সাজদার ১৬ নং আয়াত (তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে।) আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যে নামায মাগরিব ও ইশার মাঝখানে পড়া হয়। সেটা হল আওয়াবীনের নামায। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৮৪০, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮১৩]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «إِنَّ الْمَلائِكَةَ لَتَحُفُّ بِالَّذِينَ يُصَلُّونَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ إِلَى الْعِشَاءِ، وَهِيَ صَلاةُ الأَوَّابِينَ»

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় ফেরেশতাগণ ঐ লোকদের ঘিরে রাখে,যারা মাগরিব ও ইশার মাঝখানে নামায পড়ে। আর এটা সালাতুল আওয়াবীন। [শরহুস সুন্নাহ লিলবাগাবী, হাদীস নং-৮৯৭]

রাক‘আত সংখ্যা

এ নামায হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে রাক‘আত সংখ্যা নির্ধারিত নয়। ছয় রাক‘আতের ফযীলত হাদীসে আসছে। আবার এর চেয়ে কমবেশিও করা যাবে। মাগরিবের দুই রাক‘আত সুন্নাত ছাড়া ছয় রাক‘আত পড়তে পারলে উত্তম। তবে মাগরিবের দুই রাক‘আত সুন্নাতসহ পড়লেও হবে। (গুনইয়াতুল মুতামালি পৃ.৪৩০)

عَنْ حُذَيْفَةَ: «أَنَّهُ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَغْرِبَ، ثُمَّ صَلَّى حَتَّى صَلَّى الْعِشَاءُ

হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মাগরিব নামায আদায় করলেন। ফরজ শেষে তিনি নফল পড়তে লাগলেন ইশা পর্যন্ত। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১৯৪]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى سِتَّ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ لَا يَتَكَلَّمُ بَيْنَهُنَّ بِشَيْءٍ إِلَّا بِذِكْرِ اللَّهِ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً»

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ছয় রাক‘আত নামায মাগরিবের পর পড়বে, যার মাঝে আল্লাহর যিকির ছাড়া কোন কথা বলে না, তাহলে সে বার বছর ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১৯৫]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً.

হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাক‘আত নামায পড়ে, যার মাঝে কোন মন্দ কথা বলে না, তাহলে সে বার বছরের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৭৪]