যাওয়াল
যখন যুহরের ওয়াক্ত শুরু হয় তখন সাথে সাথে যাওয়ালের ওয়াক্ত শুরু হয়। যাওয়ালের নামায ২-৪ রাকা‘আত। এই নামাযকে দিনের বেলার তাহাজ্জুদ বলা হয়। এর নেকীও তাহাজ্জুদ নামাযের মতো এবং হাদীসে এসেছে, এই সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আসমানে সব দরজা খুলে দেন। (আততারগীব ওয়াত তারহীব হা.নং ৮৫৭,৮৫৯,৮৬২)
রাক‘আত সংখ্যা
আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব রা. থেকে বর্ণিতঃ সূর্য (পশ্চিম গগনে) ঢলে যাবার পর, যুহরের ফরযের পূর্বে নবি কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাক‘আত সুন্নাহ সালাত পড়তেন। আর বলতেন, “এটা এমন সময়, যখন আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তাই আমার পছন্দ যে, সে সময়েই আমার সৎকর্ম ঊর্ধ্বে উঠুক। [তিরমিযী ৪৭৮,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৮৭৯]।
যাওয়ালের নামায চার রাক‘আত।
ফায়দা
এর নেকীও তাহাজ্জুদ নামাযের মতো এবং হাদীসে এসেছে, এই সময়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আসমানের সব দরজা খুলে দেন। (আততারগীব ওয়াত তারহীব হা.নং ৮৫৭,৮৫৯,৮৬২)
নবি কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যুহরের পূর্বের চার রাক‘আত সালাত ভোররাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) সমতুল্য।’’ [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৮৮২, হাদিসটি হাসান]
আবু আইয়ুব আনসারি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিনিয়ত (পশ্চিমাকাশে) সূর্য ঢলার সময় চার রাক‘আত সালাত পড়তেন। একবার আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (আপনাকে দেখছি) সূর্য ঢলার সময় চার রাক‘আত প্রতিনিয়তই পড়ছেন!’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং যুহরের সালাত না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। তাই, আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আসমানে) উঠুক।” আমি বললাম, ‘এ সালাতের প্রত্যেক রাক‘আতেই কি কিরাত আছে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ (অর্থাৎ, দুই রাক‘আত পর সালাম ফেরানো আছে?) তিনি বললেন, “না।” (অর্থাৎ, এক সালামে চার রাক‘আত। যেভাবে আমরা যুহরের চার রাক‘আত সুন্নাহ সালাত পড়ি, ঠিক সেভাবে) [তিরমিযি, আশ-শামাইল: ২৪৯; হাদিসটি সহিহ]
যুহরের ওয়াক্ত
দ্বিপ্রহর থেকে সূর্য যখন একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন যুহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। এবং প্রতিটা জিনিসের আসল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যুহরের ওয়াক্ত থাকে। জুম‘আ আর যুহরের নামাযের ওয়াক্ত এক ও অভিন্ন। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৩)
বি.দ্র.: ঠিক দুপুরে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যে পরিমাণ থাকে তাকে ঐ জিনিসের আসল ছায়া বলা হয়। কোনো ইমামের মতে আসল ছায়া ছাড়া প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যখন একগুণ হয়ে যায় তখনই যুহরের সময় হয়ে যায়। আমাদের হানাফী মাযহাবের ফাতাওয়া এমন না। তাই একান্ত অপারগতা ছাড়া এই মতের উপর আমল করা যাবে না।
যুহর ও জুম‘আর নামাযের উত্তম সময়ঃ শীত কালে যত তাড়াতাড়ি যুহরের নামায পড়া যায় তত ভাল। গরমের দিন এক মিছিলের শেষ চতুর্থাংশে পড়া ভাল। তবে জুম‘আর নামায সব মৌসুমে আউয়াল ওয়াক্তে পড়া উত্তম। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৯)
রাক‘আত সংখ্যা
যুহরের ফরজ নামাজ চার রাক‘আত। এর সময় শুরু হয় সূর্য মধ্য আসমান থেকে ঢলে পড়ার পর। আর হানাফি মাজহাব মতে, প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের ওয়াক্ত বাকি থাকে। অর্থাৎ দ্বিগুণ হওয়ার পর জোহরের সময় শেষ হয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নম্বর:৭১৭, ৫০৬, মুসলিম, হাদিস:৯৬৯)
যুহরের (ফরজের) আগে চার রাক‘আত ও (ফরজের) পরে দু’ রাক‘আত সুন্নত (সুন্নতে মু‘আক্কাদাহ) পড়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১১৪০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৫১, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭৩০)
মোট: প্রথমে চার রাক‘আত সুন্নত অতঃপর চার রাক‘আত ফরজ তারপর দুই রাক‘আত সুন্নত নামায পড়া। যুহরের নামায মোট দশ রাক‘আত আদায় করা।
জুম‘আর নামাযের উত্তম সময়
যখন যুহরের সময় হবে তখন সাথে সাথে আযান হবে এবং তখনই মসজিদে রওনা করা জরুরী হয়ে যাবে। তিনটি জিনিস এক সাথে হবে: ১. ওয়াক্ত হওয়া ২. আযান হওয়া ৩. মসজিদে রওনা হওয়া। তারপর ১৫/২০ মিনিট বা সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা বয়ান হবে। বয়ান চলাকালীন যাদের উযূ প্রয়োজন তারা উযূ করে নিবে। বয়ান শেষে জুম‘আর দ্বিতীয় আযান হবে। আযান শেষ হলে খুতবা তারপর ফরয নামায হবে। সাধারণত শীতকালে দিন ছোট হওয়ার কারণে একটু আগে ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। সর্বোচ্চ দুপুর সোয়া একটা থেকে দেড়টার মধ্যে পুরো নামায শেষ হয়ে যাবে। যেহেতু জুম‘আর আগে বয়ানের জন্য দীর্ঘ সময় পাওয়া যায় না তাই নামায শেষে পুনরায় দীনী বয়ান বা মাসআলা মাসায়েলের আলোচনা হতে পারে।
রাক‘আত সংখ্যা
আবু ওবায়দা রাহ. বর্ণনা করেন, (আববাজান) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমার আগে চার রাক‘আত পড়তেন।
عن أبي عُبَيْدة، عن عبد الله قال : كان يصلي قبل الجمعة أربعا.
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খন্ড ৪, পৃ. ১১৪ (৫৪০২)
তাবেয়ী ক্বাতাদা রাহ.ও একথাই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমু‘আর আগে চার রাক‘আত পড়তেন, জুমু‘আর পরেও চার রাক‘আত পড়তেন।
أن ابن مسعود كان يصلي قبل الجمعة أربع ركعات وبعدها أربع ركعات.
-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক খন্ড ৩, পৃ. ২৪৭ (৫৫২৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু নিজে চার রাক‘আত পড়তেন এমন নয়, তিনি অন্যদেরও চার রাক‘আত কাবলাল জুমু‘আ পড়ার আদেশ দিতেন।
তাঁর বিশিষ্ট শাগরিদ আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রাহ.-এর বর্ণনা : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমু‘আর আগে চার রাক‘আত এবং জুমু‘আর পরে চার রাক‘আত পড়ার আদেশ করতেন। পরে যখন আলী রা. আগমন করলেন তখন তিনি আমাদেরকে জুমু‘আর পরে প্রথমে দুই রাক‘আত এরপর চার রাক‘আত পড়ার আদেশ করেন।
كان عبد الله يأمر أن نُصَلِّي قَبْلَ الجُمْعة أربعا، وبعدها أربعا، حتى جاءنا علي فأمرنا أن نصلي بعدها ركعتينثم أربعا.
-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক খন্ড ৩, পৃ. ২৪৭ (৫৫২৫)
মোট: জুম‘আর নামায মোট বার রাক‘আত। প্রথমে কাবলাল জুম‘আ চার রাক‘আত, তারপর ফরয দুই রাক‘আত, অতঃপর বা‘দাল জুম‘আ চার রাক‘আত, সবশেষে ওয়াক্তিয়া সুন্নাত দুই রাক‘আত পড়া।
জুমু‘আর মাসাইল
কোনো কোনো বড় গ্রামে এখনও আখেরী যুহর বা এহতিয়াতি যুহর পড়ে, এগুলি জায়েয নেই। বাংলাদেশের বড় গ্রামগুলো শহরের হুকুমে। সেখানে আখেরী যুহর পড়লে গুনাহ হবে। হ্যাঁ, এখনো যদি কোনো অজপাড়া থাকে যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস পাওয়া যায় না, রাস্তা ঘাট নেই, দোকান পাট নেই, কম সংখ্যক লোক ব্যবসা করে তাহলে তারা জুম‘আ ও ঈদ পড়বে না। সেখানে ভুলক্রমে জুম‘আ পড়ে ফেললে চার রাকা‘আত ইহতিয়াতি যুহর পড়ে নিবে।